রাঙ্গাকে সংসদে ক্ষমা চাওয়ার দাবি
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ৮:৫০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৯

নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নিহত নূর হোসেনকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যে দেয়ায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাকে সংসদে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে সংসদ সদস্যরা এ দাবি জানান।
পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে নূর হোসেনকে নিয়ে রাঙ্গার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার বিষয়টি তুলেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। এ বিষয়ে আলোচনা হলেও সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা সংসদে উপস্থিত ছিলেন না।
এরপর আলোচনায় অংশ নেন, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, নজিবুল বশর মাইজ ভান্ডারী। এসময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ছিলেন।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, নূর হোসেনকে নিয়ে রাঙ্গা যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে বাংলাদেশের মানুষের মনে ব্যথা দিয়েছেন। রাঙ্গা বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বলেছেন। আজকে এরশাদ জীবিত নেই। তাকে নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। রাঙ্গা নূর হোসেন নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল করে বক্তব্য দিয়েছেন। তার এমন বক্তব্যে ঘৃণা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, রাঙ্গার বক্তব্যের পর আজকে স্বৈরাচার শব্দটি দেশে ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। রাঙ্গার কুশপত্তলিকা দাহ করছে। তার এ বক্তব্যের সংসদে এসে ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ করছি।
তিনি আরও বলেন, রাঙ্গা যে এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে না থাকলে বিজয়ী হতেন কিনা এটা বলতে চাই না।
তোফায়েল বলেন, কুৎসিত বক্তব্য দিয়েছেন রাঙ্গা। একজন মানুষ যখন স্বাভাবিক থাকে তখন এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সমালোচনা করেছেন। এর জন্য তাকে জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে, জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
আমির হোসেন আমু বলেন, ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছেন। যারা ফেনসিডিল আওয়াজ তুলেছেন তারাই ফেনসিডিলের স্বপ্ন দেখে। নূর হোসেনের আমলে তো ফেনসিডিল ছিল না।
তিনি বলেন, রাঙ্গার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইতে হবে।
শেখ সেলিম বলেন, কোনো সুস্থ মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারে না। আমি তখন যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলাম। কোনো বিবেকবান মানুষ ধরনের কুটূক্তি করতে পারে না।
তিনি বলেন, রাঙ্গার শুধু ক্ষমা চাইলেই হবে না। জাতীয় পার্টি তার ব্যাখ্যা দেবে।
এছাড়া সংসদ সদস্য নজিবুল বশর বলেন, রাঙ্গার বক্তব্য নূর হোসেনের বিরুদ্ধে নয়, দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। তাকে সংসদে এসে ক্ষমতা চাইতে হবে। তা না হলে তাদেরকে আগামীতে আস্তাকুঁড়ে যেতে হবে।
এছাড়া রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টির মহাসচিবের পদ থেকেও বহিষ্কারের দাবি জানান তিনি।
এরপর তাদের বক্তব্যের জবাবে জাতীয় পার্টির দলীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এটা রাঙ্গার ব্যক্তিগত বক্তব্য। জাতীয় পার্টি দলীয়ভাবে এটা সমর্থন করে না। এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত বক্তব্য। তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা তিনি নিজেই দেবেন।
তিনি বলেন, নূর হোসেন মারা যাওয়ার পর তার বাসায় গিয়ে আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া নূর হোসেনের পরিবারকে সাহায্য করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি।
জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, এই বক্তব্য ভাইরাল হয়ে গেছে। এটা জাপার বক্তব্য নয়। জাতীয় পার্টি এতে লজ্জিত ও দুঃখিত, আমরা এতে লজ্জিত। একটি রাজনৈতিক দলের নেতা এমন বক্তব্য দিতে পারেন না।
তিনি বলেন, বানরকে লায় দিলে গাছে ওঠে। এই লায় আমরা দেইনি। দিয়েছে সংসদ। তাকে ধরে এনে মন্ত্রী বানানো হলো, একের পর এক প্রমোশন দেয়া হলো।
রাঙ্গা কখন কোথায় আন্দোলন করেছেন এটা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেন।
সংসদে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচ/এইচআর
জাতীয়: আরও পড়ুন
