মিলটন রহমানের কবি শহীদ কাদরী ও অন্যান্য প্রবন্ধ
পরিবর্তন ডেস্ক ৯:০২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭

কবি শহীদ কাদরী ও অন্যান্য প্রবন্ধ। আটটি প্রবন্ধের একটি বৃক্ষ। তবে এটি কোন একজাতীয় বৃক্ষ নয়। এর রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের ডালপালা। রয়েছে বাংলা এবং বিশ্বসাহিত্যের গুণিনদের উপস্থিতি। রয়েছে তাদের কাজ এবং অবস্থানের কথা। প্রতিটি রচনায় সময়কে ধরে রাখার চেষ্টা দৃশ্যমান। এই সময় হয়তো একদিন নতুন সময়ের হাতে তার উত্তরাধিকারের স্বীকৃতি দেবে। প্রায় প্রতিটি প্রবন্ধে প্রেক্ষাপট এবং রচনার ভাষাভঙ্গী ও রীতি প্রয়োগে স্বকীয় অবস্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা ছাপ রয়েছে।
‘যাদুরবংশীবাদক মার্কেজ’। ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর কাজ বিষয়ে রচিত এই প্রবন্ধ। ম্যাজিক রিয়েলিজমের এই যাদুকরকে নানান দিক থেকে আলো ফেলে দেখার চেষ্টা রয়েছে। তাঁর লেখক জীবনের সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত যেসব রচনা তিনি রেখে গেছেন, প্রায় প্রত্যেকটি লেখা ও সময়কে তুলে আনা হয়েছে। উঠে এসেছে মার্কেজের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক চিন্তা ও দর্শন। এই প্রবন্ধে পাঠক একসাথে পেয়ে যাবেন তাঁকে। যে কোন পাঠক মার্কেজকে পাঠের পূর্বে এই প্রবন্ধ পাঠ করলে তাঁর রচনা বুঝতে অনেক সহজ হবে। কেননা যে কোন সাহিত্যিকের বই পাঠের পূর্বে তাঁকে চেনা এবং তাঁর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশের সাথে পরিচিত হওয়া জরুরী।
‘তখন টেড হিউজ অন্য নারী শয্যায় ছিলেন’। ব্রিটিশ কবি টেড হিউজ এবং আমেরিকান-ব্রিটিশ কবি সিলভিয়া প্লাথ সম্ভবত ইংরেজি সাহিত্যের সবেচেয় বেশি আলোচিত নিজেদের ব্যক্তিগত এবং সাহিত্যের কারণে। আত্মবিধ্বংসী কবি সিলভিয়া প্লাথের মৃত্যুর এতো বছর পরও রহস্যের খোলস উন্মোচনে এখনো চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ওরসেস্টার কলেজের শিক্ষক, গবেষক স্যার জোনাথন বেট, ‘টেড হিউজ: দি আনঅথরাইজড লাইফ‘ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থটি ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি সিলিভিয়া প্লাথ আত্মহত্যার সময় স্বামী টেড হিউজ কোথায় ছিলেন এবং সেই মুহুর্তের দৃশ্য উপস্থাপন এবং তা নিয়ে আলোকপাত করেছেন। গ্রন্থটি প্রকাশের আগেই ব্রিটেন, আমেরিকাসহ পুরো বিশ্বে আলোচনার ঝড় ওঠে। তারই প্রেক্ষাপট মিলটন রহমানের আগ্রহের স্থান। ইংরেজি সাহিত্যের প্রভাবশালী এই দুই কবি সব সময় লেখকের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলো। সেজন্যেই এ রচনায় তিনি প্রসঙ্গের সাথে তুলে এনেছেন বিস্তারিত ভূমিকা ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একমাত্র ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ ‘স্ট্রে বার্ড স’ এর চায়না অনুবাদ নিয়ে তুমুল বিতন্ডা শুরু হয়েছিলো একবার। গ্রন্থটি অনুবাদ করেছিলেন চীনের তরুণ লেখক ফ্যাং টাং। তাঁর রচনার প্রেক্ষাপটে প্রবন্ধ ‘ তীব্র সমালোচনায় রবীন্দ্রনাথের স্ট্রে বার্ড‘স এর চায়না অনুবাদ‘। এই অনুবাদ গ্রন্থ নিয়ে ব্রিটেন-আমেরিকা থেকে শুরু করে ভারত-চীনসহ পুরো বিশ্বে সমালোচনা চলে। তবে এ নিয়ে বাংলাদেশে সমালোচনা তো দূরে থাক বেশ কয়েকজন তুখোড় সাহিত্যকর্মীর সাথে আলোচনা করে লেখক বুঝতে পারেন তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। ব্রিটেনের দি গার্ডিয়ান, ডেইলী মেইল, ডেইলি টাইম, বিবিসি থেকে শুরু করে আমেরিকার প্রভাবশালী পত্রিকাগুলো এ নিয়ে মেতে ওঠে।
‘নীলপদ্মের উদ্যান জিংকি বয়েস’। নোবেল বিজয়ী বেলারুশের সাংবাদিক সেটলানা আলেক্সিয়ভিস এর রিপোর্টিংধর্মী উপন্যাস ‘জিংকি বয়েস‘ বিষয়ে এই প্রবন্ধের অবতারনা। ২০১৫ সালে তাঁর নোবেল বিজয়ের পর পরই এটি রচিত। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্র এই উপন্যাসের পটভ’মি। তাতে যুদ্ধবিরোধী এই সাংবাদিক মানবিকতা ভুলন্ঠিত হওয়ার দৃশ্য তুলে এনেছেন অনুপুঙ্খ। সাংবাদিকের চোখ যখন ঔপন্যাসিকের চোখ হয়ে ওঠে তখন দৃশ্য কেমন হয়, সেই বিষয়টি উঠিয়ে আনার জন্যই এই রচনা।
মিলটন রহমান গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন, ‘আমি কবি আবুল হাসান-এর রচনাকে সব সময় বুকে আগলে রেখেছি। এখানে সেখানে চিরিকুটের মত অসংখ্য কথা তাঁকে নিয়ে লিখেছি। এই গ্রন্থভুক্ত প্রবন্ধ ‘ অনন্তযাত্রার কবি আবুল হাসান‘ সম্ভবত পূর্ণাঙ্গ রচনা। তাঁকে নিয়ে অসংখ্য রচনা রয়েছে। তবে কোন রচনা আমার দেখার দৃষ্টির সাথে এক নয়। আমি আবুল হাসানকে পাশ্চাত্যের আলো ফেলে নতুনভাবে আবিস্কার করেছি। এতে করে আমি আবারো বুঝতে পেরেছি সব ভাষার কবিতার সুর কিন্তু এক। এর চিন্তা, দর্শনও এক। কেবল কবির ভৌগলিক অবস্থান ভিন্ন। এটি আবুল হোসেনকে দিয়ে আমি আবিস্কার করেছি।’
শহীদ কাদরী দীর্ঘ প্রবাস জীবনের কবি। রচনার বহর খুব বেশি নয়, কিন্তু জনপ্রিয়। তাঁকে নিয়ে রচিত প্রবন্ধ ‘পাখিজীবনের কবি শহীদ কাদরী’। এতে প্রাবন্ধিক মূলত বলতে চেয়েছেন নতুন কোন কবিতা রচনা না করার ভেতর দিয়ে কবি কিভাবে কাব্য রচনা করে গিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি বলতে চেয়েছেন একজন কবি সব সময় কবিতা রচনা করেন। এমন কি কবি মৃত্যুর পরেও কবিতা রচনা করেন। অনেকেই বলে থাকেন শহীদ কাদরী প্রবাস জীবনে তেমন কোন কবিতা রচনা করেন নি। এই কথাটিকে ভুল প্রমান করার প্রয়াস চালিয়েছেন মিলটন রহমান। বলেছেন শহীদ কাদরী কখনো কাব্য রচনা থেকে বিরত থাকেন নি। এটি গভীর নীরিক্ষণের বিষয়।
কবি শামীম আজাদ এর কাব্যগ্রন্থ ‘জিয়ল জখম’ নিয়ে রচনা ‘দীর্ঘ সহবাসের জিয়ল জখম’। কবির অনেকগুলো কাব্যগ্রন্থ থেকে মিলটন রহমান বিশেষ কারণে এটি নির্বাচন করেছেন। তাঁর মতে এই গ্রন্থে কবি শামীম আজাদ নিজেকে মেলে ধরেছেন। এখানে তিনি চিন্তা, ভাষা, দর্শন, পারিপার্শিকতা, প্রকৃতি নিয়ে নতুন কাব্যভাষা তৈরী করেছেন। কবি বিলেতে অবস্থান করেন বলে তাঁর কাব্যভঙ্গি যে নতুন বাঁক নিতে দেখেছি তাকে তুলে ধরার জন্যই এই রচনা।
বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময় হুমায়ূন আজাদ বিষয়ে রচনা ‘তান্ত্রিক হুমায়ুন আজাদ‘। এতে হুমায়ুন আজাদ এর সাথে লেখক তাঁর ব্যক্তিগত স্মৃতিতর্পনের মাধ্যমে তুলে এনেছেন অভিব্যক্তিক চেহারা। যেখানে একজন হুমায়ুন আজাদকে দেখা হয়েছে বাংলাসাহিত্যের একজন প্রভাববিস্তারি ব্যক্তিত্ব হিসেবে। সম্ভবত হুমায়ুন আজাদই একমাত্র সাহিত্যিক যাঁর মধ্যে কোন রকম রাগঢাক ছিলো না। তিনি স্পষ্টভাষী এবং চিন্তুক। এই প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাসাহিত্যে তাঁর রাজকীয় চেহারা উপস্থাপন করার প্রয়াস লক্ষ্যনীয়।
কবি শহীদ কাদরী ও অন্যান্য প্রবন্ধ
আগামী প্রকাশনী
প্রচ্ছদ: আবু জাফর
গ্রন্থ আলোচনা: আরও পড়ুন
